থাংমি জনজাতির ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। এদের নেপালে বসবাসকারী বেশিরভাগ অংশই বর্তমানে হিন্দুধর্ম অনুসরণ করলেও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় বসবাসকারী থাংমি জনজাতির মানুষের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়া এদের বেশ কিছু অংশ সামানিজম-এ বিশ্বাস করে, যে ধর্মের উৎপত্তিস্থল তিব্বত। এই ধর্মের প্রধান দেবতা হলেন ভূমি বা পৃথিবী। এদের পালন করা সামানিজম ধর্মের অনেক বৈশিষ্ট্যই থাংমি জনজাতির নিজস্ব বিশ্বাস ও আচার-আচরণ থেকে এসেছে। আবার এই ধর্মের মধ্যে হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য মিশে গিয়ে একটি মিশ্র ধর্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। এই জনজাতির মানুষদের প্রত্যেকের বাড়িতেই এই ভূমি তথা পৃথিবীর দেবতার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। এই জনজাতির প্রধান পুরোহিত, যিনি ওই ভূমি-দেবতার উপাসনার অধিকারী তিনি ‘গুরু' নামে পরিচিত। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে থাংমি জনজাতির সঙ্গে নেপাল ও দার্জিলিং-এ বসবাসকারী অন্যান্য পার্বত্য জনজাতি, যেমন- তামাং, গুরুং, শেরপা প্রভৃতির অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। এদের সমাজ বেশ কয়েকটি গোত্রে বিভক্ত। এই জনজাতির মধ্যে মূলত ৭টি গোত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকার জ্যেষ্ঠপুত্রের উপর বর্তায়। বিবাহের ক্ষেত্রে এরা ক্ল্যান-এক্সোগ্যামিতে বিশ্বাসী, অর্থাৎ এই জনজাতির অন্তর্ভুক্ত একই গোত্রের পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিবাহসম্পর্ক অনুমোদন করা হয় না। মৃত্যুর পর এরা মৃতদেহকে নিজেদের গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত স্থানে সমাধিস্থ করে।

এই জনজাতির ভাষাটি পশ্চিমবঙ্গ এবং নেপাল-কোথাওই সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। ফলে লিম্বু, তামাং ইত্যাদি ভাষার মতো এই ভাষায় কোনো পাঠক্রম রচিত হয়নি। নেপালি এবং বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার, বাকরীতি ইত্যাদি থাংমি ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। এদের স্বভাবজাত দ্বিভাষিক প্রবণতাও থাংমি ভাষার ব্যবহারিক অবনমনের অন্যতম প্রধান কারণ।

গ্রন্থপঞ্জী: