চোকরি ভাষা হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের আঙ্গামী-পোচুরি শাখার একটি ভাষা। এই ভাষা চাকরু, চাখেসাং এবং পূর্ব-আঙ্গামী নামেও পরিচিত। এটি মূলত ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যে বসবাসকারী চাখেসাং-নাগা জনজাতির মুখের ভাষা। এছাড়া মণিপুর রাজ্যের সেনাপতি জেলা, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলার কিছু অংশে বিচ্ছিন্নভাবে এই জনজাতির মানুষ বসবাস করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের মোট সংখ্যা ১১১০৬২। এই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপির অস্তিত্ব নেই, লেখার কাজে ল্যাটিন লিপি ব্যবহৃত হয়।

এই ভাষায় মোট ৩৫টি ব্যঞ্জনধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে, যাদের মধ্যে ন্যাসাল (ভয়েসলেস ও ভয়েসড), প্লোসিভ (ভয়েসলেস, অ্যাস্পিরেটেড ও ভয়েসড), অ্যাফ্রিকেট (ভয়েসলেস, অ্যাস্পিরেটেড ও ভয়েসড), ফ্রিকেটিভ (ভয়েসলেস ও ভয়েসড) এবং অ্যাপ্রক্সিমেন্ট (ভয়েসলেস ও ভয়েসড) ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে। এই ভাষার সঙ্গে আঙ্গামী ভাষার ব্যাকরণ ও শব্দভাণ্ডারগত সাদৃশ্য রয়েছে। SIL (2000) এর তথ্য অনুসারে, নাগাল্যাণ্ডে প্রচলিত ১৭টি প্রধান নাগা ভাষার একটি হলো চোকরি। এটিকে অনেকসময় আঙ্গামী ভাষার একটি প্রকার হিসেবে গণ্য করা হলেও এটি প্রকৃতপক্ষে একটি স্বতন্ত্র ভাষা। এই ভাষায় ৪টি পৃথক টোন-এর অস্তিত্ব রয়েছে- লো, লো-মিড, হাই-মিড এবং হাই। এবং, এই ভাষায় দুটি পৃথক শব্দের মধ্যে যদি কেবলমাত্র একটি ফোনিমের পার্থক্য থেকে থাকে, তাহলে তাদের মিনিমাল পেয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়, যদি তাদের মধ্যে আইডেন্টিকাল টোন-স্ট্রাকচার থাকে। দুটি মিড-টোন এর ওভারল্যাপের বিষয়টিও এই ভাষায় লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্যটি হলো, হাই-মিড টোন লো-মিড টোনের তুলনায় অধিকতর পিচের অর্ধাংশ উচ্চারিত হওয়ার পর দ্বিতীয়ভাগে ড্রপ করে যায়। যেসমস্ত সিলেবল এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ স্বরধ্বনির অস্তিত্ব নেই, তারা এই টোনের বাহক হতে পারে না। সুতরাং এই সমস্ত সিলেবলগুলি আনমার্কড অবস্থায় থেকে যায়। এছাড়া এই ভাষায় ৬ট স্বরধ্বনি এবং কয়েকটি ডিপথং এর অস্তিত্ব রয়েছে। এই জনজাতির মানুষের মধ্যে দ্বিভাষিক অথবা স্থানবিশেষে ত্রিভাষিক প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। চোকরি ছাড়াও আঙ্গামী, তেনিদিয়ে, খেজা, রেংমা ইত্যাদি ভাষাও এই জনজাতির মানুষ ব্যবহার করে থাকেন।

চোকরি ভাষা বৃহত্তর চাখেসাং জনজাতির মানুষের মুখের ভাষা। এই জনজাতির মধ্যে দুটি শাখা রয়েছে- চোকরি ও খেজা। ‘চাখেসাং' শব্দটি তিনটি পৃথক শাখার নাম থেকে উদ্ভুত হয়েছে- চোকরি, খেজা এবং সাংতাম। নাগাল্যাণ্ড রাজ্যের ফেক জেলায় এই জনজাতির আদি বাসভূমি। পুর্ববর্তী সময়ে এদের পূর্ব আঙ্গামীদের সঙ্গে এক করে দেখা হলেও পরবর্তীকালে এরা বৃহত্তর আঙ্গামী জনজাতি থেকে পৃথক হয়ে যায়। ‘চাখেসাং' শব্দের উৎপত্তি তিনটি পৃথক নাগা জনজাতির নাম থেকে হলেও পরবর্তীকালে সাংতাম জনজাতিও চাখেসাং গোষ্ঠী থেকে পৃথক হয়ে যায়।

গ্রন্থপঞ্জী :