পশ্চিম বর্ধমান জেলা
বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত পশ্চিম বর্ধমান জেলা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল পূর্বতন বর্ধমান জেলাকে ভেঙে তৈরি করা হয়। এই জেলা ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের একটি সম্প্রসারিত অংশ। এই জেলার উত্তরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা জেলা, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ, পূর্বে নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলা, পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলা এবং দক্ষিণে হুগলি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা অবস্থিত। এই জেলার মোট আয়তন ১৬০৩ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যা ২৮৮২০৩১ জন এবং জনঘনত্ব ১৮০০ জন /বর্গকিমি।
প্রধানত পূর্বতন বর্ধমান জেলার পশ্চিমাংশের কয়লাখনি অঞ্চলগুলি এই জেলার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে প্রধানত ভারি শিল্পের বিকাশ ঘটায় এখানে বাঙালি ছাড়াও বহির্ভারতের অন্যান্য ভাষা সম্প্রদায় যেমন- মাড়ওয়ারি, গুজরাটি, তামিল, তেলুগু ইত্যাদি ভাষার মানুষের সমন্বয় ঘটেছে। এই কারণে দুর্গাপুর এবং রাণিগঞ্জ-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ভোজপুরি এবং অন্যান্য ভাষার মানুষ দেখা যায়। ভোজপুরি ভাষাকে হিন্দি ভাষার অনেকগুলি প্রকারের মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। হিন্দির মতোই এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ভারতীয় আর্য শাখার পূর্বী উপশাখার অন্তর্ভুক্ত। তামিল দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠির দক্ষিণ শাখা এবং তেলুগু দক্ষিণ-মধ্য শাখার অন্তর্ভুক্ত। এই দুটি ভাষারই নিজস্ব লিপি বর্তমান।
পশ্চিম বর্ধমান ছোটনাগপুর মালভূমির সম্প্রসারিত অংশ হওয়ায় এখানে সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি জনজাতির মানুষের বসবাস রয়েছে যারা মূলত কয়লাখনি ও শিল্পাঞ্চলগুলিতে শ্রমিক হিসেব কাজ করে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার ২২ শতাংশ অধিবাসী তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। প্রধানত রাণীগঞ্জ, জামুরিয়া, সালানপুর ইত্যাদি কয়লাখনি অধ্যুষিত ব্লকে জনজাতি জনসংখ্যার আধিক্য দেখা যায়। ফলে এখানে সাঁওতালি, মুণ্ডারি, হো, কুরুখ ইত্যাদি ভাষার ব্যবহার রয়েছে। হো ভাষা কোল জনজাতির মানুষ ব্যবহার করেন। এই ভাষার নিজস্ব লিপি ‘ওয়ারাং চিতি’ নামে পরিচিত। কুরুখ, ব্রাহুই, মালতো, মালপাহাড়ি ইত্যাদি ভাষার উৎপত্তি ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল হলেও এগুলি দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠির ভাষা। অপরপক্ষে, হো, মুণ্ডারি, সাঁওতালি ইত্যাদি ভাষা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির উত্তর-মুণ্ডা শাখার অন্তর্গত।
বাংলা সহ অন্যান্য প্রধান সরকারি ভাষা এবং জনজাতির ভাষা তথা আঞ্চলিক ভাষাসমূহের সহাবস্থানের মাধ্যমে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় একটি মিশ্র ভাষা ও আঞ্চলিক লোকসংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে।
