পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

গাংতে সংস্কৃতি

‘গাংতে’ শব্দটি ‘গংগাম’ নামক স্থানের নাম থেকে এসেছে। ‘গাংতে’ কথার আক্ষরিক অর্থ হলো ‘গংগাম নামক স্থানের অধিবাসী’। গাংতে সমাজের প্রাথমিক সংগঠন হলো গ্রাম। তবে এরা নোম্যাডিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হওয়ার ফলে এদের গ্রামগুলি উন্নত নয় এবং এদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাও অনুন্নত। মূলত ঝুমচাষই এদের প্রধান জীবিকা; তবে ঝুমচাষের পর জমির উর্বরতা হ্রাস পায় বলে এদের নিয়মিত স্থানত্যাগ করতে হয়। এদের গ্রামগুলি মূলত পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। গ্রামে ঢোকার মুখে একটি প্রধান দরজা থাকে, যা ‘খানমুওল’ নামে পরিচিত। এই দরজা প্রধানত কাঠ দিয়ে তৈরি হয়, এবং দরজার উপর যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করা শত্রুদের মাথা ঝোলানো থাকে। গাংতে জনজাতির বাড়িগুলি মূলত কাঠ, খড় ও বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়।

এদের সমাজের প্রধান ‘চিফতেনশিপ’ নামে পরিচিত, যিনি সামাজিক নিয়মনীতি ও অনুশাসনগুলির যথাযথ পালনের দিকে দৃষ্টি রাখেন। প্রধানের নির্দেশ অগ্রাহ্য করলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। গ্রামের প্রধানকে দুর্ভিক্ষ ও খরার সময় গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হয়। গ্রামের প্রধানকে ‘চাংসেউ’, ‘সালিএং’ এবং ‘খুওথা’ নামক কর দেওয়ার রীতি আছে। প্রধান ছাড়াও একটি গ্রামীণ সংসদ গাংতে সমাজের শাসনব্যবস্থার অংশ। এই সংগঠনের সদস্যদের ‘সিয়েমাং উপা’ নামে অভিহিত করা হয়। গ্রামের আয়তনের উপর ভিত্তি করে গ্রাম সংসদের সদস্যসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। প্রধান এবং উক্ত সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে গ্রামীণ আদালত গঠিত হয়, যেখানে গ্রামবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা ও বিবাদের সমাধান করা হয়। গাংতে সমাজের পুরোহিত ‘থিয়েম্পু’ নামে পরিচিত। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই পুরোহিতের কথাই আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই পুরোহিত অনেকসময় চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করে থাকেন। ওষুধ হিসেবে মূলত বন থেকে প্রাপ্ত ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার করা হয়।

এদের সমাজে শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করা হয়। কোনো শিশুর জন্মের পর তার ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার নামের শেষ অক্ষর অর্থাৎ সিলেবলটি নাতি বা নাতনীর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়। এছাড়া ঠাকুরদা নাতির এবং ঠাকুরমা নাতনীর নাম রাখেন। বর্তমানে Gangte Tribal Union (GTU) নামে সংগঠনটি গাংতে সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করছে। প্রাচীন ও নিজস্ব অ্যানিমিজম নির্ভর ধর্মের পরিবর্তে সমগ্র মণিপুরের অন্যান্য জনজাতির মতো এরাও বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করে।

গাংতে ভাষার কোনো লিখিত রূপ না থাকার কারণে এদের ইতিহাস মূলত স্মৃতিনির্ভর ও মৌখিক। লিখিত সাহিত্যের নিদর্শনও প্রায় নেই। তবে Gangte Literature Society (GLS) নামে সংগঠনটি গাংতে ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ ও উন্নতির জন্য কাজ করে চলে। কুকিচীন শাখার অন্যান্য জনজাতির তুলনায় আধুনিককালের গাংতে জনজাতির মানুষ অধিকতর শিক্ষিত ও মার্জিত। এদের প্রায় ৯৯ শতাংশ ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত। ফলে বর্তমানে গাংতে জনজাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে এদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা ক্রমশ কমছে। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় গাংতে ভাষা ‘ডেফিনিটলি এন্ডেঞ্জারড’ শ্রেনিতে স্থান পেয়েছে।

গ্রন্থপঞ্জী:

Census of India- 2011

Haokip, Pauthang. 2009. Noun Morphology in Kuki-Chin languages; Language in India

Singh, C.Y. 1995. The Linguistic Situation in Manipur. Linguistics of the Tibeto-Burman Area