রেংমা ভাষা
রেংমা ভাষা হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের আঙ্গামী-পোচুরি শাখার একটি ভাষা, যা মূলত নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অসম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী রেংমা-নাগা জনজাতির মানুষ ব্যবহার করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে প্রায় ৬৫২৩৮ জন মানুষ রেংমা ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষার কতকগুলি প্রকার তথা ভ্যারাইটি বর্তমান, যেগুলি হলো ইনজাং, মৈইয়িও, মোন, মোঝুমি, দক্ষিণ রেংমা, পশ্চিম রেংমা ইত্যাদি। এই ভাষার প্রকারগুলি, যথা, কিতানেয়ু, আযোনেয়ু (দক্ষিণ রেংমা) ইত্যাদি পরস্পরবোধ্য নয় অর্থাৎ মিউচুয়ালি আনইন্টেলিজিবল। প্রধানত
দক্ষিণ-পশ্চিম নাগাল্যান্ডের কোহিমা জেলা, অসমের কার্বি-আংলং জেলার ১৫টি নির্দিষ্ট গ্রামে এই জনজাতির মানুষের প্রধান বাসভূমি। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স পার্বত্য অংশে অবস্থিত জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে রেংমা-নাগা জনজাতির মানুষ বসবাস করেন।
রেংমা ভাষাটি সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের তিব্বত-বর্মীয় শাখার অন্তর্গত। এই ভাষার সঙ্গে নিকটবর্তী অঞ্চলগুলিতে প্রচলিত আঙ্গামী, সেমা ইত্যাদি ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক সাদৃশ্য রয়েছে। এই ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মরিসন (১৯৬৭) এর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। এছাড়া মিলস (১৯৩৭) এর কাজে রেংমা ভাষার সমাজ-ঐতিহাসিক পটভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়। এই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি নেই, লেখার কাজে রোমান লিপি ব্যবহার করা হয়। ক্রাউস (২০০৬) এর স্কিম অনুযায়ী রেংমা ভাষাকে স্টেবল এবং আনস্টেবল অর্থাৎ স্থিতিশীল ও অস্থিতিশীল- এই দুটি ভাগ্যে ভাগ করা যায়। এই বিষয়টি থেকে স্পষ্ট হয় যে ভাষাটি বিলুপ্তির সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ভালনারেবল' পর্যায়ে রয়েছে। টাইপোলজিকাল বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এই ভাষাটি একটি টোনাল ভাষা, যা মূলত অ্যাগ্লুটিনেটিং প্রকৃতির। এর প্রধান পদক্রম হলো সাবজেক্ট-ভার্ব-অবজেক্ট অর্থাৎ কর্তা-ক্রিয়া-কর্ম। এই ভাষায় ন্যাসাল ফোনিম এবং ন্যাসালাইজেশন অর্থাৎ নাসিক্যিভবনের প্রাবল্য দেখা যায়। রেংমা ভাষার নাউন ও ভার্বাল মর্ফোলজি অত্যন্ত জটিল এবং এখানে রিডুপ্লিকেশন, নাউন ক্যাটেগোরাইজেশন, ডিভাইস, ক্রিয়ার ডেক্সিস, এবং সিরিয়াল ভার্বের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। শ্রীধর ও গিরিধর (১৯৮০) এর মতে, রেংমা ভাষায় অন্যান্য অনেক নাগা ভাষার মতোই এগ্রিমেন্ট বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায় না। রেংমা ভাষায় টেনস অর্থাৎ ক্রিয়ার কাল বোঝানোর জন্য কোনো মরফোলজিকাল ডিভাইসের ব্যবহার করা হয় না। এই ভাষাটি পাস্ট-নন পাস্ট অর্থাৎ অতীত-অনতীত বিভেদ স্বীকার করে। এছাড়া রেংমা ভাষায় পারফেক্টিভ ও ইম্পারফেক্টিভ-এই দুটি অ্যাসপেক্ট এর প্রয়োগ রয়েছে। এই ভাষায় কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার সময় বোঝাতে কোনো নির্দিষ্ট মরফিম ব্যবহার করা হয় না। রেংমা ভাষায় রিয়েলিস ও ই-রিয়েলিস- এই দুই প্রকার মুডের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রধানত ক্রিয়ার কাল ও ভাব-এই দুই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই রেংমা ভাষার মোডাল ফিচারগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভাষায় বহুল প্রচলিত কয়েকটি মুড হলো- ইম্পারেটিভ, প্রোহিবিটিভ/নেগেটিভ-ইম্পারেটিভ, পোটেন্সিয়াল, নেসেসিটি, ডেসিডেরেটিভ, হোটেটিভ, নেগেটিভ ইত্যাদি। এই সমস্ত মুডের মার্কারগুলি হলো যথাক্রমে-
Mood | Marker |
---|---|
ইম্পারেটিভ (Imperative) | -ta |
প্রোহিবিটিভ/নেগেটিভ-ইম্পারেটিভ (Prohibitive/Negative Imperative) | yi-ta |
পোটেন্সিয়াল (Potential) | -gwa |
নেসেসিটি (Necessity) | -then |
প্ডেসিডেরেটিভ (Desiderative) | -nyi |
হোরটেটিভ (Hortative) | -Kho |
নেগেটিভ (Negative) | -m |
রেংমা ভাষায় সাধারণত ফিউচার টেনস অর্থাৎ ভবিষ্যৎ কালের জন্য কোনো ওভার্ট মার্কার ব্যবহৃত হয় না, পাস্ট টেনস অর্থাৎ অতীত কালের মার্কার হিসেবে -ma এবং -ya মার্কার ব্যবহার করা হয়। এই দুটি মার্কার সেমান্টিক অর্থাৎ অর্থগত দিক থেকে ডেফিনিটনেসও বোঝায়। ইন্ডেফিনিট পাস্ট এবং ডেফিনিট ফিউচার-এই দুটি বিষয় বোঝাতে -ma এবং ডেফিনিট পাস্ট অর্থাৎ নির্দিষ্ট অতীত বোঝাতে -ya মার্কার ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ ভাষার টাইপোলজিকাল বৈশিষ্ট্য হলো সিরিয়াল ভার্ব কনস্ট্রাকশন যা রেংমা ভাষাতে ব্যাপকভাবে উপস্থিত। এই বৈশিষ্ট্যটি অস্ট্রো-এশিয়াটিক এবং তিব্বত-বর্মীয় এই দুই গোষ্ঠীর ভাষার ক্ষেত্রে দেখা যায়। রেংমা ভাষার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী আঙ্গামী ও সেমা ভাষার তুলনা করলে দেখা যায়, আঙ্গামী ভাষাতে পাস্ট ও প্রেজেন্ট অর্থাৎ অতীত ও বর্তমান কালের ওভার্ট নাল মার্কিং রয়েছে, যেখানে ফিউচার অর্থাৎ ভবিষ্যৎ কালের মার্কার হলো -tyo। রেংমা এবং আঙ্গামী- এই দুটি ভাষার ক্ষেত্রেই ফিউচার/নন-ফিউচার ডিস্টিংশন দেখতে পাওয়া যায়। সেমা ভাষার ক্ষেত্রে -ma এই সাফিক্সটি পাস্ট ও ফিউচার এই দুটি ক্রিয়ার কাল বোঝাতেই ব্যবহার করা হয়, যা একটি প্রেজেন্ট-নন প্রেজেন্ট টেনস সিস্টেমকে নির্দেশ করে। ঠিক তেমনই, রেংমা ভাষাতে অনতীত কাল অর্থাৎ নন-প্রেজেন্ট টেনস এর জন্য ডেফিনিটনেস এবং প্রক্সিমাল/ডিস্টাল এই দুই বৈশিষ্ট্য প্রকটভাবে দেখা যায়। এই ভাষায় ফিউচার/নন-ফিউচার এই পার্থক্য কেবলমাত্র নন-অ্যাফার্মেটিভ বাক্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়।র্কে বিস্তারিত গবেষণার অবকাশ রয়েছে। নিউমেরাল অর্থাৎ সংখ্যাবাচক বিশেষণ সবসময় উদ্দিষ্ট বিশেষ্যের পরে বসে। এই বিষয়টিও উদাহরণের মাধ্যমে স্পষ্ট করা যায়।
গ্রন্থপঞ্জী :
Census of India, 2011.
Southern Rengma; www.ethnologue.com
Longmailai, M. 2019. A Study of Tenselessness in Rengma (Western); Languages