বর্তমানে গারো জনজাতির বেশিরভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করলেও এদের নিজস্ব প্রাচীন ধর্ম হলো ‘সানসারেক’। এদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দাকবেওয়াল’। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন গারো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘রিষি জিলমা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়।
এদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক, অর্থাৎ গারো সমাজে মেয়েরাই প্রধানের ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ কন্যা প্রথা অনুসারে তার মায়ের সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হয়। পুত্রসন্তান বয়ঃসন্ধির পূর্বে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকলেও পরে তারা অবিবাহিত পুরুষদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য নির্মিত ডর্মিটরি অর্থাৎ ‘নোকপানতে’ তে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে গোন্ড উপজাতির মধ্যে প্রচলিত ‘ঘোটুল’ প্রথার সঙ্গে এদের সাদৃশ্য রয়েছে। তবে পুরুষরা বিবাহের পর কন্যার বাড়িতে অবস্থান করে। এই ‘নোকপানতে’ অর্থাৎ অবিবাহিত পুরুষদের বসবাসের উদ্দেশ্যে নির্মিত ডর্মিটরিতে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। গারো সমাজ ‘ম্যাট্রিলিনিয়াল’ কিন্তু ‘ম্যাট্রিয়ার্কাল’ নয়। অর্থাৎ মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অধিকারী হলেও পুরুষরা সেই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ, সমাজ পরিচালনা ও গৃহের আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি দেখাশোনা করে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই গয়নার ব্যবহারে অভ্যস্ত। এদের গয়নাগুলির মধ্যে ‘নাদোংবি’, ‘নাদিরং’, ‘নাতাপ্সি’, ‘জাকসান’, ‘রিপক’, ‘জাকসিল’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গারো মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব পোশাক হলো ‘দাকমান্দা’, ‘দাকশাড়ি’ ইত্যাদি।
পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে ধান, ভুট্টা ও মিলেটজাতীয় শস্যের চাষই হলো এদের প্রধান জীবিকা; তবে এরা ঝুমচাষেও অভ্যস্ত। এছাড়া শুকর ও অন্যান্য গবাদি পশু পালনের মাধ্যমেও এরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এদের সর্বপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো ‘ওয়াংলা’, যা অক্টোবর- নভেম্বর মাসে ফসল ওঠার পর পালিত হয়। এদের নৃত্য ও সঙ্গীত মূলত সমবেত প্রকৃতির। সমবেত সঙ্গীত ‘কু-দারে-সালা’, ‘কোরে-দোকা’, ‘ইঞ্জোকা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সমবেত নৃত্যের মধ্যে ‘আজেমা-রোয়া’, ‘চাম্বিল-মোয়া’, ‘গেওয়াং-রোয়া’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব ক্রমশ বাড়তে থাকার ফলে গারো জনজাতির এই নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে।
Census of India- 2011
Burling, R. & Joseph, U.V. 2006; A Comparative Phonology of Boro Garo Languages. CIIL: Mysuru.
Marak, D. 2013 “Linguistic Ecology of Garo.” In Shailendra Kumar Singh (ed.) Linguistic Ecology of Meghalaya. EBH Publishers: Guwahati.
Watre, I & Angela, R. 2008; Garo Morphology, a descriptive analysis; NEHU.