পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

প্রকল্প সম্বন্ধে

বাংলা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার উর্দু, নেপালি, সাঁওতালি, কুরুখ ও কামতা ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এই ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ; কারণ কুরুখ ও কামতা ভাষা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলভুক্ত ভাষা না হওয়া সত্ত্বেও সর্বপ্রথম রাজ্যস্তরে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক ভাষারই বর্তমানে বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। শুধুমাত্র এই আশঙ্কার কারণগুলি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের অভাবও রাজ্যটির ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সাম্য বিঘ্নিত হওয়ার অন্যতম সম্ভাব্য কারণ। ঘটনাক্রমে, উক্ত অঞ্চলের সমগ্র জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্যও ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সাম্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গের মেট্রোপলিটান অঞ্চলগুলি বিহারি, গুজরাটি, ওড়িয়া, অসমিয়া, হিন্দি, উর্দু, মুন্ডা ও অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মান্য চলিত বাংলায় কথা বলা মানুষদের (পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশ মান্য চলিত বাংলা অর্থাৎ স্ট্যান্ডার্ড কলোকোয়াল বেঙ্গলি-তে কথা বলে) মেলামেশার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। কিন্তু এই বিষয়টি অনস্বীকার্য যে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনার পরিসর বাড়ানো জরুরিঃ

১। উপরোক্ত ৮৬ শতাংশ বাংলা ভাষাভাষী মানুষ মান্য চলিত বাংলার নিরিখে সমসত্ত্ব বন্ধনে আবদ্ধ নয়। রাজ্যের বিভিন্ন পৃথক স্থানে কথ্য বাংলার বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।

২। জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন মাতৃভাষার মোট সংখ্যা ৯১টি; যাদের মধ্যে মাত্র ৪টি ভাষা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলভুক্ত। বাকি যে ৮৭টি ভাষা তফশিলের অন্তর্ভুক্ত নয়, সেগুলি রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩.৩৬ শতাংশের মাতৃভাষা।

৩। মেট্রোপলিটান অঞ্চলগুলি ছাড়া (২০১১ খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে আর্বানাইজেশন অর্থাৎ শহরের অঙ্গীভূত হওয়ার হার ৩১.৮৯ শতাংশ) ভাষাগত আত্তীকরণের বৈশিষ্ট্যগুলি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায়; যেখানে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন এবং সেখানে ৮০টিরও অধিক অনতিবৃহৎ ভাষা-সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনঃ

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভাষা-সম্প্রদায়ের অন্তর্গত যুবসমাজের একটি বড়ো অংশ বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি যেমন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং এর সঙ্গে থাকা ক্যামেরা, শব্দ রেকর্ড করার পদ্ধতি ইত্যাদির ব্যবহারে অভ্যস্ত। যদি এই যুবসমাজ এবং স্কুলের উচ্চতর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পশিমবঙ্গের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায় তাহলে তারা মোবাইল ফোনের বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের ভাষা এবং পরিবেশজ্ঞানের পুনরুজ্জীবনের মহৎ দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। এই প্রোজেক্টটি পশ্চিমবঙ্গের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার একটি প্রয়াস; যা ‘পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এন.এল.পি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ভাষাগত পরিকাঠামো গড়ে তোলা (স্পিচ ও টেক্সট করপাস)- ফেজ ১ এবং এস এন এল টি আর কর্তৃক একটি ওপেন-অ্যাক্সেস লিঙ্গুইস্টিক পোর্টালের জন্য একটি তথ্যনির্ভর ওয়েব-পোর্টাল গড়ে তোলার প্রোজেক্টের অন্তর্গত।

ড্যাশবোর্ড হলো একটি ইউজার=ইন্টারফেস যা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র-সম্বন্ধীয় তথ্যকে ধারণ, বিন্যাস এবং তথ্য আহরণের সুযোগ দেয়। ড্যাশবোর্ড ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ইন্টার‍্যাকটিভ প্লাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে, যেখানে তথ্যকে আরও সক্রিয় এবং গতিশীল করে তোলে। পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য নির্দেশক ড্যাশবোর্ডটি এই রাজ্যের ভাষা-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সামগ্রিক আধার হিসেবে কাজ করবে।

এই ড্যাশবোর্ড ভাষা-সংরক্ষক ও নীতি প্রণয়নকারীদের এই রাজ্য-সংক্রান্ত তথ্যের উপর দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিতে এবং আঞ্চলিক স্তরে ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে সহায়তা করবে। চার্ট, গ্রাফ ও ম্যাপের সাহায্যে এই ভাষাবৈচিত্র্য নির্দেশক ড্যাশবোর্ড বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত তথ্যকে একত্রিত করে পশ্চিমবঙ্গের ভাষাসমূহের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করবে।

প্রোজেক্টের লক্ষ্যসমূহঃ

১।সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্যকে বজায় রাখা।

২। ভাষাবৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা এবং পরিস্থিতির উন্নতিসাধন।

৩। ভাষাবৈচিত্র্যের উপযোগিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।

৪। ভাষাবৈচিত্র্য সংক্রান্ত ধারণা ও জ্ঞান-এর বৃদ্ধি।