ফোম জনজাতি অর্থনৈতিকভাবে মূলত ঝুমচাষের উপর নির্ভরশীল। প্রতিকূল জলবায়ু এবং অপ্রতুল জলসেচ ব্যবস্থা ইত্যাদি কারণে এই জনজাতি চিরাচরিত পদ্ধতিতে কৃষিকাজের পরিবর্তে পাহাড়ের ঢালে ধাপ কেটে চাষ ও ঝুমচাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। ধান, ভুট্টা ও বাজরা এদের প্রধান উৎপাদিত ফসল। এছাড়া অর্থকরী ফসল হিসেবে সুপারির চাষও প্রচলিত। তবে ঝুম চাষের কারণে জমির উর্বরতা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে এই জনজাতি এক জায়গায় বসতি স্থাপন করে না। চাষের কাজ ছাড়াও প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে ফোম জনজাতি মাটির জিনিসপত্র তৈরি, বাঁশের কাজ এবং সেলাই এর মাধ্যমেও জীবিকা অর্জন করে।
ফোম জনজাতির নিজস্ব পোশাক এবং উৎসবের ঐতিহ্য রয়েছে। অন্যান্য নাগা জনজাতির মতোই ফোম জনজাতির বেশিরভাগ মানুষই বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করলেও এদের নিজস্ব উৎসবগুলির সময় ঐতিহ্যবাহী পোশাকগুলি পরার প্রচলন রয়েছে। এই পোশাকগুলি ফোম সমাজে মানুষের সামাজিক পদমর্যাদার দ্যোতক। এরা সাদা অথবা ঘন নীল রঙের সাল ব্যবহার করে, যেগুলি যথাক্রমে ‘ভিহে-আশাক’ এবং ‘নেমপং-আশাক’ নামে পরিচিত। মহিলাদের পোশাক হলো বিভিন্ন রঙের স্কার্ট, যেগুলি ‘সুং-নাং’ নামে পরিচিত। ফোম জনজাতির চারটি প্রধান উৎসব হলো যথাক্রমে ‘মনয়ু’, ‘মহা’, ‘বোংভূম’ এবং ‘পাংমো’। এদের মধ্যে মনয়ু উৎসবটি এপ্রিল মাসে অর্থাৎ শীতের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুতে ১২দিন ধরে পালন করা হয়। এই উৎসবে পুরুষরা মেয়েদের উদ্দেশ্যে দেশি মদ উৎসর্গ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শন করে। এই উৎসবের প্রথম ৬টি দিন নির্দিষ্ট নামে পরিচিত, যেগুলি হলো যথাক্রমে ‘সংতেন-লাইফেন’, ‘আইহা-ওকসোক’, ‘চিঙ্গি ওকসোক’, ‘পাংমোহা’ ইত্যাদি। কোনয়াক ও চাঙ জনজাতির মতোই ফোম জনজাতির মধ্যেও মৃত্যুর পর মৃতদেহকে সমাধি দেওয়ার প্রথা রয়েছে।
অন্যান্য নাগা জনজাতির মতো ফোম জনজাতির মধ্যেও দ্বিভাষিক অথবা ত্রিভাষিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এদের নিজস্ব ভাষা ছাড়াও এরা নাগাল্যাণ্ডের সরকারি ভাষা নাগা এবং মিজোতেও পারদর্শী। এছাড়া বেশ কিছু ফোম জনজাতির মানুষ অসমীয়া, বাংলা ইত্যাদি অন্যান্য রাজ্যের সরকারি ভাষাগুলিও ব্যবহার করে থাকেন। এই জনজাতির কোনো লিখিত ইতিহাসের অস্তিত্ব না থাকার ফলে এবং লেখার কাজে অন্য ভাষার লিপি ব্যবহৃত হওয়ার ফলে এই ভাষার ভাষিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্যের অভাব রয়েছে। অন্যান্য ভাষা থেকে প্রচুর শব্দ প্রতিনিয়ত ফোম ভাষার শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করে এর নিজস্ব বাকরীতিকেও প্রভাবিত করছে। খ্রিস্টান ধর্মের আগমনের সাথে পশ্চিমি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের ফল্র এই জনজাতির নতুন প্রজন্ম ক্রমশ ইংরেজি ভাষার ব্যবহারেও স্বচ্ছন্দ হয়ে পড়েছে এবং এই জনজাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির অবনমন ঘটছে। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় ফোম ভাষা ‘ভালনারেবল’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।
Buling, R; & Phom, A; Phom Phonology and Word List
Census of India- 2011
Frech, W. 1983; Northern Naga:A Tibeto-Burman Mesolanguage; Ph.D. Thesis, City University of New York
Marrison, G. 1967; The Classification of Naga Languages of North-East India; Ph.D.Thesis, University of London
Nagaraja, K.S. 1994; Konyak-Hindi-English Dictionary; CIIL, Mysuru