এদের প্রাচীন বাসস্থান ওড়িশার দক্ষিণাংশে হলেও এরা পরবর্তী সময়ে পরিযানের মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু নির্দিষ্ট অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এদের নিজস্ব ধর্ম অন্যান্য মুন্ডা জনজাতির মতোই প্রাচীন অ্যানিমিজম-নির্ভর ধর্ম। সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এই জনজাতি একটি নির্দিষ্ট পবিত্র স্থান ব্যবহার করে যা ‘সদর' নামে পরিচিত। যদিও এই জায়গাটির একটি বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে, তবুও যেকোনো সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাজকর্মে এই স্থানটি ব্যবহৃত হয়। এদের গ্রামের প্রধান দেবতা ‘ঠাকুরানী’ নামে পরিচিত, যিনি একটি বিশেষ জায়গায় বসবাস করেন যাকে ‘হুন্ডি' বলে। এদের অপর প্রধান দেবতা ‘নিশানি-মুন্ডা’ নামে পরিচিত। যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং বিবাহ ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানের আগে এই দেবতার উপাসনা করার রীতি প্রচলিত আছে। এরা মৃত আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। শিশুর জন্মের ন’দিন (৯) পর তার নামকরণের অনুষ্ঠান হয়। এদের প্রধান পুরোহিত ‘দিশারী' নামে পরিচিত, যিনি সমস্ত ধর্মীয় আচার-আচরণ সঠিকভাবে পালনে সাহায্য করেন। এদের নিজস্ব বিবাহের অনুষ্ঠানও পালিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যতদিন পর্যন্ত না কোনো যুবতী নিজের পরিধানের বস্ত্র নিজে বুনতে পারে, ততদিন তাকে বিবাহের যোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। বিবাহ এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় এই জনজাতির মহিলাদের মধ্যে বিভিন্নপ্রকার গয়না পরার রীতি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রচলিত গয়নাগুলি হলো খোসা ডাং (চুলের ক্লিপ), দাণ্ডি (নাকছাবি), তাইতুল (কালো গলার হার), বান্দারা (লাল গলার হার) ইত্যাদি। এই জনজাতির মধ্যে মানুষের মৃত্যুর ন’দিন (৯) পর তার অন্তিম সংস্কার করার প্রথা রয়েছে।
এই জনজাতির মানুষ মূলত দ্বিভাষিক অথবা ত্রিভাষিক। আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এদের নিজস্ব ভাষাটির পরিবর্তে ওড়িয়া, বাংলা এবং তেলুগু ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। সেইসঙ্গে এদের নিজস্ব ধর্মীয় রীতিগুলির পালনের প্রবণতাও হ্রাস পাচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস, পোশাক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ক্রমশ ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। লিপির অভাবের কারণে এদের নিজস্ব কোনো লিপিবদ্ধ ইতিহাসের অস্তিত্ব নেই। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় গুতোব ভাষা ‘ভালনারেবল' শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে; অর্থাৎ এই ভাষার সঞ্চারণের ক্ষেত্রটি ক্রমশ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
Census of India- 2011
Gutob-Gadaba Documentation; SPPEL; www.sppel.org
Judith, V. 2015. Person Markers in Gutob; Journal of South Asian Languages and Linguistics.