পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

হুগলি জেলা

হুগলি জেলা প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা যা চুচুড়া সদর, শ্রীরামপুর, চন্দননগর ও আরামবাগ-এই চারটি মহকুমা নিয়ে গঠিত। এই জেলার উত্তরে বর্ধমান জেলা, দক্ষিণে হাওড়া; পূর্বে হুগলি নদী, উত্তর পশ্চিমে বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ পশ্চিমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অবস্থিত। এই জেলার মোট আয়তন ৩১৪৯ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৫৫১৯১৪৫ জন; জনঘনত্ব ১৮০০ জন/ বর্গকিমি। প্রধানত ধান ও আলুচাষ এবং পাটচাষ ও পাটশিল্পের উপর এই জেলার অর্থনীতি নির্ভর করে।

হুগলি জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও সাঁওতালি। হুগলি নদীর উভয়তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলগুলিতে অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা অবাঙালি জনসংখ্যার আধিক্য রয়েছে; এদের প্রধান ভাষা হিন্দি। এছাড়া সাঁওতালি ভাষা হুগলি জেলার তিন শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা। পোলবা, পাণ্ডুয়া, ধনিয়খালি থানা এলাকায় সাঁওতালি ভাষাভাষী মানুষজনের আধিক্য রয়েছে। পাণ্ডুয়া থানার ১৪ শতাংশ অধিবাসী সাঁওতালি ভাষা ব্যবহার করেন। কৃষিজমিতে মজুর হিসেবে সাঁওতালদের ব্যবহার করা হয় যা হুগলি জেলায় সাঁওতাল জনজাতির জনাধিক্যের কারণ। হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া এবং গোঘাট থানা এলাকাতেও সাঁওতাল জনজাতির বসবাস রয়েছে। হুগলি জেলার মগরা, ভদ্রেশ্বর ইত্যাদি এলাকায় উর্দু ভাষাভাষী মানুষজন দেখা যায়। মগরা থানায় ৭ শতাংশ এবং শ্রীরামপুরের পাঁচ শতাংশ উর্দু ভাষার মানুষজনের বসবাস। হুগলি জেলার মাত্র আট শতাংশ অধিবাসী দ্বিভাষিক। এই দ্বিভাষিক মানুষেরা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে মূলত ইংরেজিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রধানত জনজাতি অর্থাৎ সাঁওতালদের মধ্যেই দ্বিভাষিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ৩৯ শতাংশ সাঁওতালি মাতৃভাষার মানুষ হিন্দি ও বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ। সাঁওতালি ভাষার মানুষেরা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ওড়িয়া ভাষাকেও গ্রহণ করেছেন।

হুগলি জেলায় ব্যবহৃত ভাষাগুলি সরকারি কাজে ব্যবহৃত অথবা প্রধান আঞ্চলিক ভাষা। রাঢ়বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এবং রাজধানী কলকাতার নিকটবর্তী অবস্থানের কারণে বাংলা ভাষার মান্য চলিত রূপটিই এই জেলায় মূলত ব্যবহৃত হয়। হিন্দি এবং উর্দুও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। সাঁওতালি ভাষার মানুষজনের আধিক্য এই ভাষাটিকেও রাজ্য সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে এবং অলচিকি লিপিও সাঁওতালি ভাষার নিজস্ব লিপি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ফলে হুগলি জেলাতে বিপন্ন মর্যাডাভূক্ত জনজাতির ভাষার অস্তিত্ব সেই অর্থে দেখা যায় না।