ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমান জেলায় মাহালি জনজাতির মানুষ বসবাস করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে সমগ্র ভারতে মাহালি জনজাতির মানুষের সংখ্যা ২৫৯৬২৩, এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মাহালিদের সংখ্যা ৮১৯৫৪। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় এই জনজাতি ‘মাহালি’ এবং ঝাড়খণ্ড ও বিহারে ‘মাহলি’ নামে পরিচিত। ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল হল মাহালি জনজাতির মানুষের আদি বাসভূমি; যেখান থেকে পরিযানের মাধমে তারা পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের তফশিলি জাতি ও উপজাতি আইন অনুসারে মাহালিরা উপজাতির মর্যাদা পায়।

মাহালি জনজাতি এবং তাদের নিজস্ব ভাষা সমনামে পরিচিত, অর্থাৎ মাহালি জনজাতির মানুষের মাতৃভাষা হল মাহালি। গ্রিয়ারসন (১৯০৪, ৩২) এর মতে, মাহালি ভাষা অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাপরিবারের মুন্ডারি শাখার অন্তর্গত। দাস (১৯৯০) এর মতে মাহালি ভাষার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরে বসবাসকারী সাঁওতালদের ভাষার মিল রয়েছে। রাসেল ও হীরালাল (১৯৭৫, ১৪৬-১৪৮) এর মতে, মাহালি ও সাঁওতাল উভয়ে একই উপজাতির অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু মাহালিরা তুলনামূলকভাবে সাঁওতালদের থেকে সামাজিকভাবে নিম্নতর অবস্থানে রয়েছে, কারণ মাহালিরা হিন্দুদের অধীনে ভূমিদাস হিসেবে কাজ করে থাকে।

মাহালি ভাষা শাব্দিক ও ধ্বনিগত দিক থেকে মুন্ডারি শাখার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও শব্দভাণ্ডারের প্রতি ঋণী। সামাজিক সম্পর্কসূচক শব্দগুলির সঙ্গে কিছু উপসর্গ ও অনুসর্গ জুড়ে তারা সামাজিক পদমার্যাদা, বয়স ইত্যাদি বিষয়গুলির সামঞ্জস্য রক্ষা করে। লিঙ্গগত বৈচিত্র্যের সূচক হিসেবে মাহালি ভাষায় ‘কোড়া’, ‘কুড়ি’, ‘গিদরা’ ইত্যাদি শব্দ প্রচলিত। প্রজন্মগত বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে ‘গারোম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। মাহালি ভাষার সামাজিক সম্পর্কবাচক শব্দগুলি বক্তার লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় না।

গ্রন্থপঞ্জী :