খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতকের পূর্বে অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের আগমনের পূর্বে বালটি জনজাতির মধ্যে বৌদ্ধ ও বন ধর্মের প্রাধান্য ছিলো। প্রধানত সপ্তদশ শতাব্দী থেকে সুফি ইসলামীয় মতবাদ এখানে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর পরবর্তীকালে শিয়া ও সুন্নি মুসলিম ধর্ম প্রচলিত হয়। বর্তমানেও বালটি জনসমাজের বেশ কিছু অংশ বন ধর্ম এবং তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি নিজেদের সংস্কৃতির অঙ্গীভূত করেছে। ফলে বৃহত্তর পাকিস্তানের সঙ্গে এদের সংস্কৃতির মূলগত পার্থক্য বর্তমান। বর্তমানে বালটি জনজাতির ৬০ শতাংশ মানুষ সুন্নি মুসলিম, ৩০ শতাংশ সুফিবাদের অনুসারী, এবং ১০ শতাংশ শিয়া মুসলিম। বালটি ও দর্দিক সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এখানে একটি মিশ্র সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে।
এদের প্রধান উৎপাদিত ফসল হলো গম এবং শাকসবজি। এই জনজাতির প্রধান দুটি খাবার ‘থালতাক' ও ‘আজোখ’ নামে পরিচিত। তবে পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চলের অনুর্বর মৃত্তিকা ও চরমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং জলসেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা- ইত্যাদি কারণে সারাবছর কৃষিকাজ করা সম্ভব হয় না। এদের অধিকাংশের নিজস্ব জমি নেই। পার্বত্য অঞ্চলের তৃণভূমিতে পশুচারণের মাধ্যমেও এরা জীবিকা অর্জন করে থাকে। কৃষিক্ষেত্রের দায়িত্বগুলি পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা হলেও পারিবারিক দায়িত্বগুলি মূলত মহিলারাই পালন করে থাকে। এদের সমাজে পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহের প্রচলন রয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে বালটি সমাজ কতকগুলি গোত্র ও উপগোত্রে বিভক্ত। তবে একই গোত্রভুক্ত পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে বিবাহ বালটি সমাজে স্বীকৃত নয়। এই জনজাতির আধুনিক শিক্ষার হারও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এরা আধুনিক জীবন ও শিক্ষার সুযোগ সম্পর্কে অবহিত নয়। পুর্বে এই জনজাতির উৎসবগুলিতে বৌদ্ধ অনুষঙ্গ বর্তমান থাকলেও এদের প্রধান উৎসবগুলিও বর্তমানে প্রধানত ইসলাম ধর্ম ও রীতি অনুসরণ করেই পালন করা হয়। বিশেষ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র, যেমন- সুরনাই, কারনাই, ঢোল, চাং ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসবগুলির সময় বাজানো হয়ে থাকে। তবে তিব্বতী বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের সংমিশ্রণে এই অঞ্চলগুলিতে একটি মিশ্র সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও পুর্ব ভারতের এলাকাগুলিতে মূলত কাজের সূত্রে পরিযানের মাধ্যমে বাল্যটি জনজাতির মানুষের আগমন ঘটে। এই কারণে এই সমস্ত অঞ্চলে বালটি জনজাতির কোনো ঘনসন্নিবিষ্ট জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ফলে এদের ভাষাটিও পূর্বভারতে তেমন প্রচলিত নয়। এই ভাষাটি ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় ‘ভালনারেবল' শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ এই ভাষাটি পুর্বপুরুষদের থেকে উত্তর প্রজন্মে যথাযথভাবে সঞ্চারিত হয়নি। উর্দু এখানকার প্রধান সরকারি ভাষা হওয়ার কারণে বালটি জনজাতির নতুন প্রজন্ম নিজস্ব ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষকেই ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উক্ত কারণগুলিই বালটি ভাষা ও সংস্কৃতির অবনমনের পিছনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
Lobsang, G.H. 1995. A Short Sketch of Balti-English Grammar
Pandey, A. 2010. Introducing Another Script for Writing Balti
Rangan, K. 1975. Balti Phonetic Reader; CIIL
Read, A.F.C. 1934. Balti Grammar; Royal Asiatic Society, London